ঘরে বসে অনলাইন পাসপোর্ট আবেদন

ঘরে বসে অনলাইন পাসপোর্ট আবেদন

বর্তমান সময়ে আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজনের একটি জিনিস পাসপোর্ট। বিশেষ করে উন্নত বিশ্বে অধিবাসন চিকিৎসা এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক বেশি ঝোক থাকার কারণে পাসপোর্ট এর প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। তবে বাংলাদেশে এই পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার নিয়ে অনেক রকমের হয়রানির শিকার হতে হয়।

তবে হ্যাঁ আপনি যদি সঠিকভাবে সকল তথ্য জানেন তবে আপনাকে কেউ হয়রানি স্বীকার করতে পারবেনা। কারণ আমরা যারা পাসপোর্ট তৈরি করতে চাই তাদের অধিকাংশই না জানার কারণে হয়রানির শিকার হতে হয়। কিভাবে পাসপোর্ট আবেদন করতে হয় এবং কোন প্রসেসের মাধ্যমে পাসপোর্ট পেতে হয় এটা না জানার কারণেই মূলত তৃতীয় পক্ষের দ্বারা হয়রানি শিকার হতে হয়।

যার কারণে অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন থেকে শুরু করে হাতে পাওয়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিষয় নিয়ে নিজেকে জানতে হবে। আমরা আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি পাসপোর্ট এর খুঁটিনাটি তথ্য নিয়ে সাজিয়েছি। আপনারা যারা পাসপোর্ট আবেদন করতে চান অথবা পাসপোর্ট সমস্যা পড়ে আছেন তারা আমাদের আর্টিকেলটি পড়লে অনেকটাই উপকৃত হবেন।

অনলাইনে কিভাবে পাসপোর্ট আবেদন করতে হয়, কোন প্রসেসিং এর মাধ্যমে পাসপোর্ট হাতে পেতে হয়।জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকলে কিভাবে পাসপোর্ট আবেদন করতে হয়।বিদেশ থেকে পাসপোর্ট আবেদনের নিয়ম।পাসপোর্ট এর ফি প্রদানসহ আরো নানান ধরনের তথ্য আমরা আপনাদেরকে এই আর্টিকেলের মধ্যে জানাবো।তাই পাসপোর্ট সম্পর্কিত সর্বশেষ তথ্যের জন্য সম্পর্ক আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ই পাসপোর্ট কি?

ই পাসপোর্ট হল একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট। ই পাসপোর্ট এর ভিতর এমিটেড করে একটি মাইক্রো প্রসেসর চিপ লাগানো থাকে। ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো উক্ত মাইক্রোচিপে সংরক্ষিত থাকে। এখন পর্যন্ত বিশ্বে প্রায় ১২০টি দেশে ই পাসপোর্ট চালু করা হয়েছে।

ই পাসপোর্ট কবে চালু হয়?

বাংলাদেশে ই পাসপোর্ট চালু হয় ২০২০ সালের ২২শে জানুয়ারি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা একটি সম্মেলনে ই পাসপোর্ট উৎপাদন করেছিল। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ সর্বপ্রথম ই পাসপোর্ট সুবিধা চালু করে।

ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে

ই পাসপোর্ট করার জন্য নাগরিকের জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা স্মার্ট কার্ড এবং আবেদনের ফর্মটা সবচেয়ে বেশি জরুরী। এছাড়া সাধারণ পাসপোর্টে আবেদন করতে যে সকল ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয় তার সবগুলোই লাগবে।
  • ই পাসপোর্টের সুবিধা কি
  • ই পাসপোর্ট এর মাধ্যমে খুবই দ্রুত সময়ে বিদেশ ভ্রমণ করা যায়
  • ই পাসপোর্ট থাকলে ভিসা জটিলতা কম হয়
  • ইমিগ্রেশন করতে অনেকটাই সহজ হয় ই পাসপোর্ট থাকলে
  • খুবই অল্প সময়ের মধ্যে বিমানবন্দরে ভিসা চেকিং সম্পূর্ণ হয়

পাসপোর্ট কত প্রকার

বাংলাদেশের পাসপোর্ট মূলত তিন ধরনের। একটি পাসপোর্ট এর উপরে সবুজ মলাট থাকে যেটিকে সাধারণ পাসপোর্ট বলা বলা হয়।লাল মলাট যুক্ত পাসপোর্টটি হল কূটনৈতিক পাসপোর্ট এবং নিল মলাট যে টিতে থাকে তা হল দাপ্তরিক পাসপোর্ট।

মেশিন রিডেবল/এমআরপি পাসপোর্ট কি

এমআরপি বা মেশিন রিটেবল পাসপোর্ট হল এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে আবেদনকারীর তথ্য ছবির নিচে জলছাপের মাধ্যমে লুকায়িত ভাবে রাখা হয়। পাশাপাশি সেখানে একটি এমআরজেড মেশিন থাকে যা বহনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য বিবরণী ধারণ করে। মুক্ত পাসপোর্ট থাকার কারণে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় অনেক কম সময় লাগে।

অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম

পূর্বের দিনের মতো পাসপোর্ট আবেদন করার জন্য সরাসরি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ঘরে বসেই খুব সহজেই পাসপোর্ট আবেদন করা যায়। আসন আমরা কয়েকটি ধাপে দেখে নেই কিভাবে অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করতে হয়।

অনলাইন পাসপোর্ট আবেদন

আবেদনের ওয়েবসাইট

প্রথমে আপনাকে একটি সচল ব্রাউজার থেকে বাংলাদেশের সরকারি পাসপোর্ট ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এছাড়াও আপনি এইখানে ক্লিক করেও সরাসরি ওয়েবসাইটে যেতে পারবেন। মনে রাখবেন অবশ্যই আপনার ডিভাইসে ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে।
  • ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর মেনুবার থেকে apply online নামক জায়গাটিতে ক্লিক করুন
  • ক্লিক করার পর আপনার সামনে একটি পেজ আসবে, যেখানে আপনি আপনার পাসপোর্ট অফিস এবং থানার নাম সিলেক্ট করবেন।
  • আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে আবেদন করে থাকেন তাহলে Yes নির্বাচন করুন বিদেশ থেকে আবেদন করলে No সিলেক্ট করুন।
অনলাইন পাসপোর্ট আবেদন


মেইল আইডি ভেরিফিকেশন

 ই পাসপোর্ট আবেদন করার জন্য একটি সচল মেইল একাউন্ট দিয়ে ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়।রেজিস্ট্রেশন করার জন্য সঠিক ইমেইল আইডি সাবমিট করে ক্যাপচা পূরণ করুন।এরপর ওয়েবসাইট থেকে আপনাকে একটি মেইল করা হবে।মেইলে একটি অ্যাক্টিভেশন লিংক থাকবে।উক্ত লিংকে ক্লিক করলেই আপনার একাউন্টে এক্টিভ হবে।

অনলাইন পাসপোর্ট আবেদন

পাসপোর্ট এর প্রকারভেদ বাছাই

এখানে আমরা দুই ধরনের পাসপোর্ট দেখতে পারবো। একটি হল Ordinary Passport এবং Official Passport অপরটি। আপনি যদি সাধারণ নাগরিক হন তাহলে Ordinary Passport সিলেক্ট করুন এবং সরকারি চাকরিজীবী বা কর্মকর্তা হলে Official Passport সিলেক্ট করুন।

পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ

পাসপোর্ট আবেদন ফরম এর প্রথম ধাপে ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হয়। তবে একটি বিষয় মাথায় রাখবেন আপনি যদি একাউন্টটি দিয়ে নিজের জন্য আবেদন করে থাকেন তবে I Apply for Myself টিক মার্ক দিয়ে রাখুন। আর যদি অন্য কারো জন্য আবেদন করেন তাহলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

আস্তে আস্তে সঠিক ভাবে তথ্য পূরণ হয়ে গেলে Save And continue বাটনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যান।

ঠিকানা নির্বাচন

পাসপোর্ট এর তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে এই অপশনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাসপোর্ট আবেদন করার সময় আপনি যে ঠিকানায় উপস্থিত আছেন সেটি দেওয়ার চেষ্টা করবেন। মনে রাখবেন আপনি আবেদনের সময় যে ঠিকানা উল্লেখ করবেন সেখানেই পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে।

এক্ষেত্রে আপনি যদি চাকরির জন্য এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় থাকেন তাহলে সেভাবেই স্থায়ী ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করবেন। তবে একই এলাকার বাসিন্দা হয়ে অন্য এলাকা নির্বাচন করলে পুলিশ ভেরিফিকেশন সমস্যা হবে।


আইডি তথ্য

পরবর্তী ধাপে এসে আপনারা এ ধরনের একটি লেখা দেখতে পারবেন "NO,I Don't Have Any Previous Passports"। পাসপোর্ট নতুন আবেদন করলে এটি সিলেক্ট করতে হবে। তবে আপনার যদি পূর্বে দেশের পাসপোর্ট থাকে সেক্ষেত্রে এটি সিলেক্ট করতে হবে না। তখন সিলেট করবেন Yes,I Have Another PAssport.

এরপর আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর সাবমিট করে ধাপটি সম্পন্ন করে ফেলুন। উল্লেখ্য যে যাদের এনআইডি কার্ড হয়নি তারা জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর ব্যবহার করতে পারবেন।

মাতা পিতার তথ্য

এই ধাপে এসে আবেদনকারীর পিতা-মাতার তথ্য নির্ভুলভাবে প্রদান করতে হবে। আসুন দেখি নাই পিতা-মাতার কোন ইনফরমেশন গুলো প্রয়োজন হয়।
  • পিতা ও মাতার নাম অবশ্যই {এনআইডি কার্ড অনুসারে}
  • পিতা ও মাতার এন আই ডি কার্ড নাম্বার
  • পিতা মাতার জাতীয়তা
  • পিতা-মাতার পেশা
সতর্কীকরণ: আবেদনকারীর পিতা মাতার তথ্য দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে যেন তথ্যের মিল থাকে। যদি কোন তথ্যের মিল না থাকে তা পাসপোর্ট আবেদন করার আগেই সংশোধন করে নিতে হবে।

বৈবাহিক অবস্থা

আবেদনকারী বিবাহিত নাকি অবিবাহিত তা উল্লেখ করতে হবে। এক্ষেত্রে বিবাহ করার পর স্ত্রী চলে গেলে ডিভোর্স অপশন সিলেক্ট করতে হবে।

জরুরী মুহূর্তের যোগাযোগ

জরুরী মুহূর্তে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আপনার অভিভাবকের তথ্য দিতে হবে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর সময় উক্ত অভিভাবককে ফোন করা হয়। কোন সময় আবেদনকারীর সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হলে অভিভাবকের নাম্বারে যোগাযোগ করা হয়। এক্ষেত্রে অভিভাবকের নাম নাম্বার এবং জাতীয় পরিচয় পত্র সাবমিট করতে হয়।    

পাসপোর্ট এর ধরন বাছাই

পাসপোর্ট আবেদনের কাজ প্রায় শেষ। এখন আপনাকে পাসপোর্ট এর ধরন বাছাই করতে হবে। আপনি পাঁচ বছরের জন্য করবেন নাকি দশ বছরের সেটা নির্ধারণ এবং কত পেজের পাসপোর্ট আবেদন করবেন তাহলে করতে হবে।

এক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে আপনি যদি অনেক বেশি ভ্রমণ করে থাকেন তাহলে ৬৪ পৃষ্ঠার জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে আপনার যদি বিদেশ যাওয়া আসা কম হয় তাহলে ৪৬ পৃষ্ঠার আবেদনে যথেষ্ট।


ডেলিভারির ধরন সিলেকশন

ডেলিভারির দিক থেকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়। একটি হল রেগুলার, এবং বাকি দুইটি এক্সপ্রেস ও সুপার এক্সপ্রেস।

রেগুলার ডেলিভারি সিলেক্ট করলে ১৪ থেকে ২১ কর্ম দিবসের মধ্যে আবেদনকারী পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যাবে। তবে ডকুমেন্টস ও পুলিশ কিয়ারেন্সের সমস্যা থাকলে কিছুটা বিরম্বনার শিকার হতে হয়।

সুপার এক্সপ্রেস অর্থাৎ অতীব প্রয়োজনে ডেলিভারি পেতে হলে অনলাইনে আবেদন করা যাবে না। এটার জন্য সরাসরি অফিসে গিয়ে উপযুক্ত কারণ দেখাতে হবে।

পাসপোর্ট ফি প্রদান করা

আমরা এতক্ষণ যে পাসপোর্ট আবেদন করলাম এখন তার ফি প্রদান করতে হবে। ফি প্রদান করার জন্য করার জন্য আমরা দুইটি অপশন পাব।
  • অনলাইনে পেমেন্ট
  • ব্যাংকে পেমেন্ট
অনলাইন বা ব্যাংকের মাধ্যমে কিভাবে পাসপোর্ট ফি প্রদান করতে হয় তা আমরা নিচের দিকে দেখিয়ে দেবো।

সতর্কতা: ফি প্রদান করার আগে আপনার আবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখুন কোন জায়গায় ভুল তথ্য আছে কিনা। যদি কোন ভুল তথ্য থাকে তাহলে তা এখনো সংশোধন করে নিন।

আবেদন প্রিন্ট কপি বের করা

সকল প্রসেস সম্পূর্ণভাবে সাবমিট করলে আপনার সামনে একটি পিডিএফ ডাউনলোড হবে। পিডিএফ টি সঠিকভাবে প্রিন্ট করে নিন।

কাগজপত্র ও বায়োমেট্রিক প্রদান

অনলাইনে আবেদন করার পর ছয় মাসের মধ্যে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আপনার প্রয়োজনে কাগজপত্র জমা দিয়ে বায়োমেট্রিক প্রদান করতে হবে। বায়োমেট্রিক এর জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইরিশ সংগ্রহ করতে পারে। সবকিছু সংগ্রহ করা হলে আপনাকে টোকেন দেওয়া হবে। উক্ত টোকেনটি সযত্নে সংরক্ষণ করতে হবে।

সর্বশেষ পাসপোর্ট সংগ্রহ

সকল ধাপ শেষ হলে আপনার বাসায় পুলিশ আসবে। পুলিশ আসলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। পুলিশ আপনার সাধারণ তথ্য যাচাই করতে আসবে। আপনার নামে কোন ধরনের সাধারণ মামলা এবং আপনি অবৈধ পথে বিদেশ যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট তৈরি করছেন কিনা তা যাচাই করবে।

পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর পাসপোর্ট তৈরি হলে আপনার মোবাইল নম্বরে একটি এসএমএস প্রদান করা হবে। এসএমএস প্রদান করার পর আপনি পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে নিজের স্বাক্ষর দিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন। পাসপোর্ট সংগ্রহের সময় অবশ্যই ডেলিভারি স্লিপ সঙ্গে নিতে হবে।

সতর্কতা: বিশেষভাবে মনে রাখবেন একজনের পাসপোর্ট কখনোই অন্য ব্যক্তি সংগ্রহ করতে পারবে না।

নবীনতর পূর্বতন